ভারতের লোকসভা নির্বাচন ২০১৯; উপমহাদেশের গণতন্ত্র



ভারতের লোক সভা নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন NDA জোট পুনরায় ক্ষমতায় বসতে যাচ্ছে। এনডিএ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। বিশ্বের বৃহৎ গণতন্ত্রের দেশ ভারতের এই নির্বাচন প্রায় দুই মাস ধরে চলছিল। গণতন্ত্রের প্রতি আগ্রহ থাকাতে আমি এই নির্বাচন প্রায় পুরোটা পর্যবেক্ষণ করেছি। জন্মের পর থেকে নিজ দেশে গণতন্ত্র না দেখার ফলে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ গুলোর নির্বাচন নিয়ে আমার আগ্রহ প্রবল। যদিও ভারতের ইতিহাসে এই নির্বাচন কিছুটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে। তার কারণ ভারতের নির্বাচন কমিশন এবার খুবই বিতর্কিত হয়েছে। নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতি বিতর্কিত হয়েছে। পাশাপাশি নরেন্দ্র মোদী'র এক্টিভিটি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে । যদিও এই বিশাল কর্ম সম্পাদন করা সহজ কাজ নয়। তাই বলতে হয় ভারতের গণতন্ত্র এখনো মজবুত।


কংগ্রেসের প্রতীক
কংগ্রেস এবার দল হিসেবে দুর্বল ছিল। তবুও রাহুল গান্ধির নতুন নেতৃত্ব কংগ্রেসকে আগামী দিনের স্বপ্ন দেখাবে। বিরোধী জোট গুলোর পরাজয়ের অন্যতম কারণ ঐক্যবদ্ধ হতে না পারা। বিরোধীরা সবাই বিজেপি বিরোধী ছিল কিন্তু একতাবদ্ধ না হওয়ার ফলেই তাদের ভোট ভাগ হয়ে গেছে। ঐক্যবদ্ধভাতে একক প্রার্থী দিলে সমীকরণ টা একটু ভীন্ন হতো। সে যাই হোক সবচেয়ে পজেটিভ দিক হলো উপমহাদেশের সব ডানপন্থার বিপরীতে বাংলাদেশ পাকিস্তান এসব দেশে বাম রা রাম হয়ে গেলেও একমাত্র কংগ্রেস তার নীতিতে ঠিক আছে। সেকুলারিজমের যেই মহান নীতি তা একমাত্র কংগ্রেস ই ধারণ করছে। আমাদের দেশের আওয়ামীলীগ এর মত দলও আজ ডানপন্থা আর মৌলবাদের কাছে পরাজিত। সেক্ষেত্রে সোনিয়া গান্ধীর দৃঢ় নেতৃত্বে রাহুল গান্ধীর উচ্চ মানসিকতায় কংগ্রেস আজও গান্ধিজীর পথে অটুট। আর এ নির্বাচনে রাহুল, প্রিয়াঙ্কার যে পরিপক্বতা দেখা গেছে আগামী দিনে নতুন ভাবে অনেক সময়ের জন্য কংগ্রেস ক্ষমতায় আসবে। এবারের নির্বাচনেও কংগ্রেস আগের তোলনায় ভালো করেছে। যা বিরোধী শক্তি হিসেবে ভালোই কাজ করবে।

তৃণমূলের প্রতীক
পশ্চিমবঙ্গের দিকে তাকালে দেখা যায় মমতার তৃণমূল কংগ্রেস এগিয়ে থাকলেও বিজেপির উত্থান হয়েছে চোখে পড়ার মত। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে তৃণমূলের "মা, মাটি, মানুষ" এখন প্রশ্নবিদ্ধ। যেমন টা বামদের ক্ষেত্রে হয়েছে। দীর্ঘকাল ক্ষমতায় থাকার ফলেও পশ্চিমবঙ্গের এবার বামে রা শূন্য আসনের দলে পরিণত হয়েছে। ঠিক একটা সময় মমতাও হয়ে যাবে শূন্য। তা ছাড়া উপমহাদেশে বামরা নেতৃত্বের ভুল সিদ্ধান্ত এর কারণে কখনই ভালো অবস্থানে যেতে পারেনি। সামনে কতটুকু যাবে সময় বলে দিবে। আর এই পশ্চিমবঙ্গ বামেদের থেকে আমাদের বর্তমান ক্ষমতাশীনরা কিছু শিক্ষা নিতে পারে। আর অধিক সময় ক্ষমতা থাকলে দুর্নীতি বিচারহীনতা বেড়ে যায় এটা যুগেযুগে প্রমাণিত হয়েছে।

বাংলাদেশ
সে যাই হোক বহুলাংশে বিতর্কিত দল বিজেপি ক্ষমতায় আসলেও বাংলাদেশ নীতিতে তারা খুব একটা পরিবর্তন হবেনা। কারণ বাংলাদেশ তাদের বরাবরের মত খুশিই করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে ভারতের চাওয়ার কিছু নেই কিন্তু ভারতের কাছে বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে রোহিঙ্গা ইস্যু, তিস্তা ও সীমান্ত হত্যারোধ নিয়ে অনেক চাওয়ার আছে। যদি এই টার্মে সরকার পরিবর্তন হতো তাহলে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা ন্যায্যতা পেতাম। কারণ কংগ্রেস কখনই বাংলাদেশকে ঠকায়নি। এর প্রমান ১৯৭১ সাল এর শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর কংগ্রেস। রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাষ্ট্র সংঘে ভারত আমাদের পাশে ততটা দাঁড়ায়নি। যা বাংলাদেশ আশা করেনি। তাই বাংলাদেশের জন্য কংগ্রেস কে কিছুটা দরকার ছিল।
বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের পড়শী হওয়া সত্বেও আমরা গণতন্ত্রহীনতায় ভোগছি এটা আমাদের জন্য লজ্জার। আমাদের নতুন প্রজন্ম ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের আরো একবার ভাবার সময় এসেছে। না হয় ইতিহাস আজকের রাজনীতিকে কখনই ক্ষমা করবে না। ভারতের সিংহাসনে বিজেপি ও নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী কে আবারো একবার স্বাগতম।
বিঃদ্রঃ এই লেখা আমার একান্তই নিজের পর্যবেক্ষণ । আপনার মনের বা আদর্শের সাথে নাও মিলতে পারে। তাই বলে আপনার নীতি ও আদর্শ আমার উপর চাপানোর চেষ্টা হীনতার সামিল।
লেখকঃ নাঈম আজিজ চৌধুরী
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী

No comments

Powered by Blogger.