নারীর কোন দিবস নেই-উপহাসের শেষ নেই।
নারীদের নিয়ে কবিতাটি দেখুন
নারীর কোন দিবস নেই-উপহাসের শেষ নেই।
একজন নারীর জন্য কোন দিবস নেই। একজন নারীর জন্য কোন রাত্রিও নেই। নারীর কাছে প্রতিটি দিবস-রজনী একই রকম।রোজ সকালে উঠে রান্না ঘরে যাওয়ার পর গভীর রাতে বের হওয়া প্রতিটি গৃহিণী নারীর জীবনের প্রকৃতচিত্র। আর চাকুরীজীবী হলে প্রতিনিয়ত লোভী চরিত্রহীন হাজারো চোখের ধর্ষণে জর্জরিত। নারীর কোন রাজ্য নেই। এই বিশাল সৃষ্টি রাজ্যে নারী কেবলই বঞ্চিত এক দাসী।নারীর যখন শিশুকাল তখন শাসন করেছে বাবা।নারী যখন দুরন্ত কিশোরী তখন শাসন করেছে বড় ভাই।নারীর যখন যৌবনের পালকিতে তখন শাসন করেছে প্রেমিক বা স্বামী।সবশেষ নারী ভেবেছিল অন্তত মা হলে হয়তো সন্তান কে শাসন করতে পারবে, সন্তানের রাজ্যে রাজা হবে। কিন্তু নির্মম পরিহাস, সন্তানও মাকে শাসন করেই গেল।শুধু কি তাই? নারীর বৃদ্ধ হওয়ার পর নাতিরাও নারীকে অপমানের গর্তে ঠেলে দিল।হায় নারী! যে বৃক্ষ তুমি রোপণ করলে সেই বৃক্ষের ছাঁয়া পাওয়ার অধিকার তোমার নেই।তুমি কেবলই উত্তপ্ত রোদে জ্বলেপুড়ে আঙ্গার হও ।এ তোমার জন্মগত উপহার।শুনেছি তোমার জন্মের পরও অনেকে অখুশী হয়েছিল।মেয়ে হওয়ার খবরটি সহজে প্রকাশ করত না লোক লজ্জার ভয়ে।
নারী তুমি কয়েকদিনের জন্য তোমার কর্মের চাকা বন্ধ রাখ- দেখবে পৃথিবীটা তলিয়ে যাচ্ছে।মুহূর্তে পৃথিবীটা ক্ষুদার্ত হয়ে উঠেছে। অর্থনৈতিক সূচক তলানিতে ঠেকেছে।কর্মস্থলে উপস্থিতির ধস নেমেছে।বিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীশূণ্য হয়ে পড়েছে।গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে গেছে। অতপর বস্ত্র সংকটে পৃথিবীটা উলঙ্গ হয়ে গেছে।নগ্ন পৃথিবী তখনই তোমার মর্ম বোঝবে হয়তো।এই পৃথিবীটাকে তুমি ই তোমার আচলতলে ঢেকে রেখছো। কিন্তু এই পৃথিবীটা তোমায় কি দিয়েছে? একটি উপহাস করার জন্য দিবস দিয়েছে! এই দিবসেও কি একদিনের জন্য তোমাকে দাসত্ব মুক্তি দিয়েছে? তাও যদি দিত তাহলে এই দিবসটাও আর নারী দিবস না হয়ে ক্ষুদা দিবসে রূপ নিতো। এই রক্ষণশীল সমাজ তোমাকে শুধুই রক্ষিতা করে রেখেছে। সারা পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যত আইন আছে তার কয়েকগুণ আইন শুধু তোমাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আছে।অর্থাৎ তুমি পৃথিবীর চেয়েও বড়।তোমার বিশালত্ব পৃথিবীর কয়েকগুণ। এই নগ্ন সমাজ তোমাকে খুব ভয় পায়।তাই তোমাকে দমিয়ে রাখে।
আসলে আমাদের সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্বব্যবস্থায় নারীনেত্রী বা নারীপদগুলো কেবলই সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বরাদ্দ। মিছলের আগে নারী থাকলে সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়।অফিসে নারী থাকলে মনে ফূর্তি আসে।সার্বিস সেন্টারে নারী কণ্ঠে সার্বিস দিলে জনগণ আকৃষ্ট হয়।এসবের জন্য নারী পদগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সৃষ্টি করা হয়।প্রকৃতপক্ষে নারী ক্ষমতায়নে এইগুলো কোন অবদান রাখেনা।আর মৌলবাদের কাছে তো নারী কেবলই চার দেয়ালের সৌন্দর্য। স্বামীর পায়ের নিচে স্বর্গ লুকায়িত। আসলে নারীর কোন ক্লান্তি নেই, নেই কোন বিশ্রাম। এটি কেবলই যন্ত্র চালিত রোবট। এর কোন নিজস্ব ইচ্ছে আকাঙ্খা থাকতে নেই।সভ্য সমাজ এটাই আশা করে নারীর কাছ থেকে।এর পরও যদি নারী কিছু চেয়ে বসে তাহলেই শত অপবাদ।বেশ্যা খ্যাতি,পল্লীর পতিতা। আর সমাজে যত গালি রচিত হয়েছে সবই নারীকে তার্গেট করে। আপনি একটি গালির অভিধান সংগ্রহ করুণ। এতে ৯৯% গালির অর্থে নারীর নাম পাবেন। এটাই একমুখী সমাজের চিত্র। মহান পুরুষদেবতা যত দোষ করুকনা কেন তাকে গালি দেয়ার সময় নারীকে ঘিরেই গালি রচিত হয়। এই একমুখীতাই আজ পৃথিবীকে যুদ্ধ, রক্ত ও দুর্ভিক্ষ উপহার দিয়েছে। কিন্তু যদি অর্ধেক নারীর মন মতোও হতো তাহলে পৃথিবীটায় শুধুই ভালোবাসা বিরাজ করতো।পৃথিবীতে সব সফলতার পিছনে একজন নারীর হাত আছেই।স্বীকার করুক বা না করুক।এটাই নির্মম সত্য।
নারী তোমার জন্য সামনে আরো বেশী কঠিন সময় আসছে।এই সমাজ এমন এক প্রজন্ম সৃষ্টি করছে যারা ধর্ষণের মত নিকৃষ্ট খেলায় পারদর্শী। এমন একটা প্রজন্ম আসছে যারা পর্ণে আসক্ত। এরা এখন স্বাভাবিক যৌনতাও উপভোগ করেনা। এরা নারীর প্রতি বেদনাদায়ক যৌনতায় আগ্রহী। এর প্রমাণ গুগল সমীক্ষা অনুযায়ী পর্ণ সাইটগুলোতে হার্ডকোর পর্ণই পছন্দের শীর্ষে। এবার বোঝ ওরা তোমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। এই পৃথিবী তোমার জন্য বাস অযোগ্য হয়ে পড়ছে। দিনদিন কট্টরপন্থা বেড়ে যাচ্ছে।তোমাকে ওরা পরাজিত করেই ছাড়বে।কিন্তু ভেবো না যেদিন তুমি শেষ হয়ে যাবে সেদিন পৃথিবীটাই শেষ হয়ে যাবে।
অতপর হয়তো তোমার আরেকটি জন্ম হবে। সেখানে অন্তত তুমি স্বাধীন হয়ে জন্মাও এই কামনা করি।
এ ছাড়া আমার আর কিছুই করার নেই। তোমাকে নারী নামক উপহাসের দিবসে মিথ্যে শুভ কামনা জানানো ছাড়া আর কিছুই করার নেই।কারণ আমিও পুরুষ। আমাকে বিশ্বাস করো না।তোমার জন্য কিছু করতে গেলেই আমার সমলিঙ্গরা আমাকে গালি দিবে।তাতেও সমস্যা ছিলনা কিন্তু গালিটা যে তোমাকে ঘিরেই রচিত হবে! এটাই আমার দুর্বলতা। আমি যে তোমাকে মিছে মিছে হলেও ভালোবাসি হে নারী.......................... .
লেখকঃ নাঈম আজিজ চৌধুরী
--বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী
আপনিও পাঠাতে পারেন আপনার লেখা কবিতা,গল্প,প্রবন্ধ,বিজ্ঞান ও গবেষণা বিষয়ক লেখা।আমরা আপনার প্রতিভাকে সবার কাছে প্রকাশ করতে চাই। আমাদের ফেসবুক পেইজে https://www.facebook.com/TalentBanglaMedia/?ref=bookmarks ও ওয়েবসাইটে লেখা পাঠাতে পারেন।সৃজনশীলতাই কাম্য।
No comments