শিক্ষা,প্রযুক্তি ও আমাদের মানষিকতা



যে সমাজে চিন্তা ও প্রযুক্তি সমানভাবে বৃদ্ধি পায়না সে সমাজে বিসৃঙ্খলা দেখা দিবে এটাই স্বাভাবিক।বর্তমানে বাংলাদেশ নামক ব-দ্বীপটি প্রবল অস্বস্তিতে সময় পার করছে।এখানে প্রতিনিয়ত ঘটনা অঘটন বেড়েই চলছে।মুহূর্তে সব খবর সবার কাছে ছড়িয়ে পড়ছে প্রযুক্তির কল্যাণে।এতে করে মানুষের মাঝে নানান ইস্যু বিরাজ করছে।ইস্যুর পরে ইস্যু চাঁপা পড়ছে। স্বভাবে বাঙালিরা কৌতুহলী প্রবণ।বংশ পরায়নভাবে প্রবল সমালোচক জাতি।তাই সব অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলোকে নিয়ে এরা বেশি মাতামাতি করে।বিশ্বায়নের যুগে এ জাতি কঠোর পরিশ্রমের জোরে নিজেদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করেছে কিন্তু রাজনৈতিক ও দুর্নীতির আগ্রাসনে এই জাতি মেধা মননে ততটা উন্নতি সাধন করতে পারেনি।যদিও বা এ দেশে বিশ্বের অনেক দেশের মোট জনসংখ্যার চেয়েও গ্রেজুয়েটের সংখ্যা বেশি।কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মানবিক ও মুক্তিবুদ্ধির চর্চায় এ জাতি বরাবরই পিছিয়ে আছে।তাই অর্থ দিয়ে এ জাতির প্রযুক্তি কেনার সামর্থ্য অর্জিত  হলেও তা ব্যবহারের সক্ষমতা তৈরী হয়নি। এর ফলে সমাজে এক প্রকার তথ্য সন্ত্রাসের আবির্ভাব হয়েছে।এর পয়দা লুঠছে সমাজের এক শ্রেণির ক্ষমতালোভীরা আর ধর্মান্ধ হীন গোষ্ঠীরা।যারা বরাবরি বাঙালী জাতীয় চেতনা বিরোধী।এই সন্ত্রাসের আক্রমণের স্বীকার আমাদের  জাতীয়তাবাদের মেধাবী মুখগুলো।

বিশ্বে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষ সভ্যতাকে আরো আধুনিক ও শক্তিশালী করে তুলছে।কিন্তু সেই তুলনায় আমরা প্রযুক্তির ভুল ব্যবহারের ফলে সমাজে নিকৃষ্ট কাজগুলো বাড়িয়ে তুলছি।একজন তথ্য প্রযুক্তির ছাত্র হিসেবে আমি অবশ্যই স্বীকার করি প্রযুক্তিতে ভালো এবং খারাপ দুটি দিকই বিদ্যমান। সেই দিক থেকে একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি আমাদের সমাজে প্রযুক্তির খারাপ দিকটাই বেশি লক্ষ্য করছি।সহস্র মেধা ও পরিশ্রমের ফলে একটি প্রযুক্তি তৈরী করে প্রযুক্তিবিদরা।কিন্তু আমরা তা থেকে খারাপ দিকটাই বেছে নেই।তার প্রমাণ আমাদের সমাজে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে খুন ও ধর্ষণের মত ঘৃণীত অপরাধ।সভ্য সমাজে ধর্ষণ শব্দটি কখনই থাকতে পারেনা।প্রযুক্তি বিশ্বকে একটি গ্রামে পরিণত করলেও মানুষকে এনে দিয়েছে একাকিত্ব।আমাদের মাঝে মানবিক সম্পর্কগুলো দিনদিন কমে যাচ্ছে।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমাদের সামাজিক ঐক্যের বদলে বিভক্তি উপহার দিচ্ছে।আমরা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ সময় গুলো অপচয় করছি প্রযুক্তির অপব্যবহারের ফলে।এভাবে চলতে থাকলে মানব সভ্যতা ধ্বংস হতে আর বেশি সময় লাগবে না।প্রযুক্তির দুইটি দিক - উজ্জ্বল দিক ও অন্ধকার দিক।এই অন্ধকার দিকেই আমাদের আগ্রহ বেশি।এই অন্ধকার দিক আমাদের নতুন প্রজন্মকে এক বিকৃত মানষিকতায় গড়ে তুলছে।যেখানে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার কোন স্থান নেই।যেখানে বিরাজ করে এক বিকৃত যৌনাচার।লিঙ্গবৈষম্যতা ও ন্যায় বর্জিত মানষিকতা।

প্রযুক্তির এই মন্দ ব্যবহারের পিছনে অন্যতম দায়ী আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা।বিশাল জনসংখ্যার এই দেশে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ কম নয়।কিন্তু পুস্তক নির্ভর এই শিক্ষিত মানুষগুলো কি আসলে মানবিক শিক্ষায় শিক্ষিত? আমার দৃষ্টিতে তা মনে হয়না।আমাদের বেশিরভাগ শিক্ষিতরাই দুর্নীতির রাজা মহারাজ।এর কারণ আমরা উচ্চ শিক্ষিত হওয়ার পিছনে স্বপ্ন দেখি একজন টাকা ওয়ালা মানুষ হওয়ার।আমরা স্বপ্ন দেখি একজন বড় চাকুরীজীবী হবো।বাড়ি-গাড়ীর মালিক হবো।বিশ্ব ও মানব কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দেব এমন স্বপ্ন কয়জনে দেখি? আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের মানবিক হওয়ার বদলে প্রখর অনুভূতি প্রবন করে দেয়। তাই আমরা সামান্য কারণেই হিংস্র হয়ে উঠি।আমাদের শিক্ষা একজন কর্মী হওয়ার বদলে একজন অফিসার হওয়ার স্বপ্ন দেখায়। তাই আমরা দিন অলস আর বেকারত্ব কে বরণ করে নিচ্ছি।কিছু কাজকে বড় ভাবছি আর কিছু কাজকে ছোট মনে করে অবজ্ঞা করছি।উচ্চ চাকরীর আশায় বেকারত্বকে বরণ করে নিলেও ছোট কাজের মাধ্যমে যে একজন উদ্যোক্তা হওয়া সম্ভব তা আমরা বেমালুম ভুলে গেছি।আমরা এ কথা ভাবিনা যে সবাই যদি চাকরীর আশা করি তাহলে চাকরী দিবে কে? কেউতো চাকরী দেয়ারও স্বপ্ন দেখতে পারি।এর জন্য তো উদ্যোক্তারই প্রয়োজন।চাকরি হলো ছাদে উঠার মই এর মতো -যা দিয়ে তোমাকে মাড়িয়ে প্রতিনিয়ত কিছু মানুষ উপরের দিকে উঠবে আর তুমি সারাজীবন মই হয়েই রয়ে যাবে।

অতএব আমাদেরকে কর্মমুখী সু-প্রযুক্তি নির্ভর মানবিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে।প্রযুক্তির সব ভালো দিকগুলো গ্রহণ করে মন্দ দিকগুলো বর্জন করতে হবে।মাতৃ ভাষায় বিজ্ঞান,শিল্প-সাহিত্য ও প্রযুক্তির চর্চা বাড়াতে হবে।আদি মানষিকতা কিন্তু প্রযুক্তি আধুনিক এমন হলে আমরা প্রযুক্তির ব্যবহার কখনই সঠিক ভাবে করতে পারব না।এর ফলে আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় কখনই শান্তি ফিরে আসবে না।তখন বিশ্ব আমাদেরকে বর্বর জাতি হিসেবে চিহ্নিত করবে।আর প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে সাধারনকে সচেতন করার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদেরই বেশি।তাই আসুন নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কারের ভাবনার পাশাপাশি প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারেও সচেতনতা বৃদ্ধি করি।নিজেও উন্নত মানষিকতার হই অন্যকেও মানষিকতায় সচেতন করি।তবেই আমাদের শিক্ষা,প্রযুক্তি ও আমাদের মানুষিকতার পরিবর্তন ঘটবে।বিশ্বের বুকে আমরা হয়ে উঠব আদর্শ ও শক্তিশালী একটি জাতি।


লেখকঃ নাঈম আজিজ চৌধুরী

--বিশ্ববিদ্যালয়  শিক্ষার্থী




আপনিও পাঠাতে পারেন আপনার লেখা কবিতা,গল্প,প্রবন্ধ,বিজ্ঞান ও গবেষণা বিষয়ক লেখা।আমরা আপনার প্রতিভাকে সবার কাছে প্রকাশ করতে চাই। আমাদের ফেসবুক পেইজে https://www.facebook.com/TalentBanglaMedia/?ref=bookmarks ও ওয়েবসাইটে লেখা পাঠাতে পারেন।সৃজনশীলতাই কাম্য।

No comments

Powered by Blogger.