ইচ্ছের কাছে পরাজিত মেয়েটির গল্প





আরোয়া যেন দ্বিতীয় রোকেয়া

অষ্টম শ্রেনী থেকে আরোয়ার পড়াশুনো বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। হয়ত আপনি মনে করছেন দারিদ্র্যতার কারণে।কিন্তু না। সে এই শহরের একজন সফল ব্যবসায়ীর মেয়ে তার বাবার টাকার অভাব নেই।এখন প্রশ্ন করতেই পারেন তাহলে আরোয়ার পড়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কেন?

আধুনিক যুগ বা মধ্যযুগ যেটাই বলেন- এই যুগে এসে একটা মেয়ের পড়াশুনার জন্য এতো কিছু করতে হয় তা দেখে  নিশ্চয় সবার মানতে কষ্ট হবে। বেগম রোকেয়া থাকলে হয়ত আরোয়ার জন্য সবার আগে প্রতিবাদ করতেন।কিন্তু আরোয়া যে তার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। শত বাধা বিপত্তি কে উপেক্ষা করে সে তার সংগ্রাম করছে বিগত পাঁচ টা বছর। সে এখন ইন্টার পরীক্ষাও দিয়েছে।

মেয়েটির স্বপ্ন ছিলো সে একজন ডাক্তার হবে কিন্তু যেখানে তার বাবা পড়াতেই চায়না সেখানে ডাক্তার হওয়া তার স্বপ্ন ছাড়া আর কিছুইনা।আসলে তার বাবা ছিলেন কিছুটা কঠোর ধর্মীয় মনোভাবের মানুষ।পড়াশুনার জন্য মেয়ে পর্দার খেলাফ করুক তা তিনি কখনো চাইতেন না।সে আর যাইহোক- অষ্টম শ্রেণীতে পাশ করারপর তার বাবা বলল- আর পড়তে হবে না। তারপরেও অনেক চেষ্টা করে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হলো। তবে তাও শর্ত সাপেক্ষে।তার বাবা বললেন- এস এস সির শেষ করে আর পড়তে হবেনা। তারপর নবম শ্রেণীতে গ্রুফ  চয়েসের সময় আরোয়া বলল- আমি বিজ্ঞান নিয়ে পড়বো কিন্তু তার বাবা বললেন, না তুমি অন্য গ্রুফ নিয়ে পড়ো।

কারণ তার বাব জানতো আরোয়ার ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছে আর বিজ্ঞান নিয়ে পড়লে যে ভাল কিছু করবে তাই আর বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে দিলোনা। বাবা যেন ডাক্তার হওয়ার পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ালো। যাইহোক বাবার সিদ্ধান্ত উত্তম সিদ্ধান্ত। তাই নিজের স্বপ্ন টা কে মাটি চাপা দিলো। নবমে শ্রেণীতে তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে গেল।পরিবারকে উপেক্ষা করে সে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হলো কিন্তু পরিবার যেনো এই ব্যপারে দায়িত্বহীন। কারো কোন ষাঁড়াশব্দ নেই। মেয়েটি কিভাবে আগাবে কি করবে। আমাদের দেশে একাদশ শ্রেনীতে উঠলে কতো কোচিং প্রাইভেট পড়তে হয়, আমরা নিজেরাইতো পড়েছি।কিন্তু আরোয়ার বেলায় যেন ভিন্ন চিত্র। কোন প্রাইভেট কোচিং কিছুই সে পড়েনি বা তাকে পরিবার পড়ায়নি। তা নিয়েও মেয়েটির কারো প্রতি কোন অভিযোগ নেই কারণ অনন্ত সে পড়ছে হলেও। তার বান্ধবীরা কোচিং প্রাইভেট সব করছে কিন্তু আরোয়ার টাকা পয়সা থেকেও যেন নেই। কেউ অভাবে পড়তে পারেনা আর সে টাকা পয়সা থেকেও পড়তে পাড়ছে না একটু ভাল পারিবারিক মন মানষিকতার জন্য।

অবশেষে মিয়েটি উপায় খোঁজে পেলো  Youtube যা বর্তমানে  শেখার সব চেয়ে দ্রুত মাধ্যম। আরোয়া Youtube এর সাহায্যে তার পড়াশুনা গুলো বুঝে নিতো ।এভাবেই চলছিল আরোয়ার শেখার সংগ্রাম।ইন্টারে সে ভালো একটা রেজাল্ট করলো। কিন্তু তা যেন ঘর থেকে শুরু করে বন্ধু বান্ধবী কেউ মেনে নিতে পারছেনা তার এই সফলতা। কি ভাবে একটা মেয়ে ক্লাশ, প্রাইভে& কোচিং এসব না করে এতো ভালো ফলাফল করলো। এখন আরোয়া ভাবলো ভালো  ভার্সিটি গুলোয় পরীক্ষা দিবে কিন্তু তার বাবা যেন পথের কাঁটা হয়ে দাড়াল। না তুই আর পড়তি পারবি না। কোন কোচিং করার দরকার নাই।  পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা দেয়ার দরকার নাই। বাবার কাছে যেনো এতোটুকুতে এসে পরাজয় শিকার করল মেয়েটি। জানি না এটা কি বাবার প্রতি তার সম্মান নাকি শোকে কাতর একটি পরাজিত মেয়ের নীরবতা।

সারাদেশে ভার্সিটি পরীক্ষা চলছে। আরোয়ার বান্ধবীরা পরীক্ষা দিচ্ছে। ফ্রম পূরণ করছে সবাই। বান্ধবীরা বলছে এই আরোয়া তুই ফ্রম তুলবি না?নির্বাক মেয়েটির  কোন উত্তর নেই। শুধু আক্ষেপের বড় নিশ্বাস ছাড়ছে আর মনেমনে ভাবছে- সবাই পরীক্ষা দিচ্ছে কিন্ত আমি অসহায় পারছিনা।

এই বিশাল শহরের পুরান ঢাকার কোন একটা বাড়ীর চার দেয়ালের মাঝে আরোয়ার দিন গুলো যাচ্ছে। কখনো শুয়ে কখনো বা ছোট্ট পাখির খাঁচার মতো বারান্দায়  দাঁড়িয়ে।সে একা একা বসে থাকে কারো সাথে  তেমন কথাও বলেনা।কেউ তার দুঃখ বুঝতে চায়না। মা বাবা,ভাই বোন সবাই যেন অচেনা মানুষের ভূমিকা পালন করছে।

সকাল গড়িয়ে দুপুর,দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে যায়। মেয়েটির দুপুরের খাওয়া এখনো হয়নি। গোলস করতে ভুলে যায়। সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে অথচ মাথার চুল গুলো বাঁধতে ভুলে যায়। এলোমেলো যেন প্রতিটা মুহুর্ত।সারাদিন সে এখন ভাবে সে কখন ভার্সিটি তে যাবে কবে। আবার ভর্তি হবে। এই নিয়ে যেন আরোয়ার প্রতিটা সেকেন্ড যাচ্ছে কিন্তু তাকে বুঝবার মতো কেউ নেই।হয়তো সময়ের ঘড়িতে আরোয়ার জীবনের নতুন কোনো মোড় নিবে।কিন্তু দীর্ঘ সাধনার পরেও ভার্সিটর সবুজ ক্যাম্পাস টিতে যেতে না পারার আক্ষেপ তাকে কোনোদিন ভুলাতে পারবে না।আচ্ছা আরোয়া  কি কোনদিন তার বাবাকে স্বপ্ন ভাঙার দায়ে ভালোবাসতে পারবে?আমাদের সমাজ থেকে কত মেধাবী আরোয়া রা হারিয়ে যায় তার খবর কি আমরা রখেছি? উত্তরটা আপনার কাছেই আছে।আশেপাশে তাকিয়ে দেখুন.............................

লেখকঃ জিহাদ আনন্দ
শিক্ষার্থী,শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি

(তরুণ লেখকের জন্য শুভ কামনা TBM এর পক্ষ থেকে)


আপনিও পাঠাতে পারেন আপনার লেখা কবিতা,গল্প,প্রবন্ধ,বিজ্ঞান ও গবেষণা বিষয়ক লেখা।আমরা আপনার প্রতিভাকে সবার কাছে প্রকাশ করতে চাই। আমাদের ফেসবুক পেইজ https://www.facebook.com/TalentBanglaMedia/?ref=bookmarks ও ওয়েবসাইটে লেখা পাঠাতে পারেন।সৃজনশীলতাই কাম্য।


No comments

Powered by Blogger.