প্রজন্ম আইনস্টাইনকে চিনো, সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে চিনোনা।কিন্তু কেন?







বিজ্ঞানের জগতে যার অবদান কখনো অস্বীকার করা যাবেনা তিনি হলেন  মহা বিজ্ঞানী  সত্যেন্দ্রনাথ বসু। যিনি ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারী উত্তর কলকাতার গোয়া বাগান অঞ্চলে স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুলের পাশে ২২ নম্বর ঈশ্বর মিত্র লেনে  জন্ম গ্রহণ করেন । তাঁর পরিবারের আদি নিবাস ২৪ পরগণার কাঁড়োপাড়ার সন্নিকটে বড়োজাগুলিয়া গ্রামে । তাঁর বাবা সুরেন্দ্রনাথ বসু ছিলেন পূর্ব ভারতীয় রেলওয়ের হিসাবরক্ষক এবং মা আমোদিনী দেবী ছিলেন আলিপুরের খ্যাতনামা ব্যবহারজীবী মতিলাল রায়চৌধুরীর কন্যা । সত্যেন্দ্রানাথ বসু সাত ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন।তিনি ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের ৪ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় মৃত্যু বরণ করেনতিনি ছিলেন একজন বাঙালী পদার্থবিজ্ঞানী। তাঁর গবেষণার ক্ষেত্র ছিল গাণিতিক পদার্থ বিজ্ঞান। 


সত্যেন্দ্রনাথ বসু আলবার্ট আইনস্টাইনের সঙ্গে যৌথভাবে বোস-আইনস্টাইন পরিসংখ্যান  প্রদান করেন, যা পদার্থবিজ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার বলে বিবেচিত। ছাত্রজীবনে অত্যন্ত মেধাবী সত্যেন্দ্রনাথ কর্মজীবনে সম্পৃক্ত ছিলেন বৃহত্তর বাংলার তিন শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কলকাতা, ঢাকা ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরপ্রফুল্লচন্দ্র রায়মাদাম কুরী প্রমুখ মণীষীর সান্নিধ্য পেয়েছেন। আবার অনুশীলন সমিতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক ও স্বাধীনতা আন্দোলনের সশস্ত্র বিপ্লবীদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগও রাখতেন তিনি।তিন শুধুমাত্র বাংলায়  বিজ্ঞানচর্চার প্রবল সমর্থকই ছিলেন না, সারা জীবন ধরে তিনি বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার ধারাটিকেও জারি করে গেছেন। এই প্রসঙ্গে তাঁর অমর উক্তি, “যাঁরা বলেন বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চা হয় না, তাঁরা হয় বাংলা জানেন না, নয় বিজ্ঞান বোঝেন না।” বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার প্রসারের উদ্দেশ্যে বিজ্ঞান পরিচয় নামে একটি পত্রিকাও প্রকাশ করেন তিনি। ব্যক্তিজীবনে সত্যেন্দ্রনাথ ছিলেন নিরলস, কর্মঠ ও মানবদরদী মণীষী। বিজ্ঞানের পাশাপাশি সঙ্গীত ও সাহিত্যেও ছিল তাঁর আন্তরিক আগ্রহ ও বিশেষ প্রীতি।এক কথায় তিনি ছিলেন একজন মানবিক মানুষ।




কিন্তু দুঃখের বিষয় আইনস্টাইন আমাদের কাছে যতটা পরিচিত,  সত্যেন্দ্রনাথ বসু ততটা পরিচিত নন।আমাদের প্রজন্ম দূরের আইনস্টাইকে চিনে কিন্তু কাছের সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে চিনেনা। এর কারণ প্রচারমাধ্যমে আইনস্টাইন সুযোগ পেয়েছেন সত্যেন্দ্রনাথ বসুর চেয়ে বেশি। এ ছাড়া স্বদেশী বিজ্ঞানসাধকের প্রতি আমাদের উৎসাহ খুবই কম। এটা আমাদেরই দীনতা।জাতি হিসেবে আমরা কখনই নিজেদের মেধাকে মূল্যায়ন করতে শিখিনি। তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানের কিছু কিছু বিষয়ে সত্যেন্দ্রনাথ বসুর অবদান আইনস্টাইনের অবদানের চেয়ে বেশি। শুধু তা-ই নয়, আমাদের জন্য গৌরবের বিষয় হলো, সত্যেন বসু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫ বছর অধ্যাপনা করেছেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরই ক্যাম্পাস, শ্রেণিক ও গবেষণাগার হলো তার যুগান্তকারী তত্ত্বের উৎস। বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় তখন পদার্থবিজ্ঞানে যেসব বিষয় পড়ানোর মতো উপযুক্ত শিক্ষক ছিল না, আমাদের এই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই সব বিষয়ে শুধু পাঠদানই নয়, রীতিমতো গবেষণা করা হতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড কেন বলা হতো তা সহজেই অনুমান করা যায়।কিন্তু এখন কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেই আগের মতো আছে? এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানের চেয়ে বিসিএস এর চর্চা বেশি হয়।


আর আমাদের নতুন প্রজন্ম কি সতেন্দ্রনাথ বসু কে চেনে? আমাদের মাধ্যমিক পর্যায়ের কয়টি পাঠ্য বইয়ে বসু সম্পর্কে লেখা আছে? এ দেশে অনেক কিছু জানার জন্য অনেক দিবস বা অনুষ্ঠান পালন করা হয়। কিন্তু জাতির শ্রেষ্ঠ গৌরব বসুকে সবার মাঝে তুলে ধরার জন্য কি কোন আয়োজন করা হয়? বিজ্ঞানের যুগে আমরা একটুও বিজ্ঞান চর্চা করিনা। আবার যারা চর্চা করে তাদেরকেও মূল্যায়ন করিনা।আমরা জাতির প্রতিভাকে সম্মান দিতে শিখিনি।তবুও যত দিন বিজ্ঞানের চর্চা থাকবে, তত দিন চিরঞ্জীব থাকবে সত্যেন বোসের অবদান। সত্যেন বসুর অমর কীর্তির কথা স্মরণ করে আমাদের নতুন প্রজন্মকে আবার বিজ্ঞান চর্চায় ঝাপিয়ে পড়তে হবে। নিজর ভাষা ও সংস্কৃিতির মাধ্যমে বিজ্ঞান চর্চা করতে হবে।


(তথ্যঃ উইকিপিডিয়া ও ইন্টারনেট)




আপনিও পাঠাতে পারেন আপনার লেখা কবিতা,গল্প,প্রবন্ধ,বিজ্ঞান ও গবেষণা বিষয়ক লেখা।আমরা আপনার প্রতিভাকে সবার কাছে প্রকাশ করতে চাই। আমাদের ফেসবুক পেইজে https://www.facebook.com/TalentBanglaMedia/?ref=bookmarks ও ওয়েবসাইটে লেখা পাঠাতে পারেন।সৃজনশীলতাই কাম্য।



No comments

Powered by Blogger.