হয়তো মৃত্যু দিয়েই মেয়েটির তীব্র যন্ত্রনার অবসান হবে



মেয়ে!!


একটা মেয়ের জন্ম হওয়া। ধীরেধীরে পরিবারের সবার মাঝে বড় হওয়া।সুখ-দুঃখ,রাগ-অভিমান,ভালোবাসা আর খুনসুটি, ভাইবোন,মা-বাবা,সবার সাথে ভাগ করে নেওয়া! এক সময় উপযুক্ত বয়সে পৌছে যাওয়া।তখন পরিবারের সবার মুখে একটাই কথা থাকবে। মেয়ে বড় হয়েছে,এবার বিয়ে দিতে হবে! হঠাৎ একদিন পাত্রও পছন্দ হয়ে যাবে মেয়েটার অজান্তে।ইচ্ছের মূল্যায়নটুকুও কেউ করবেনা। শুরু হবে বিয়ের তোড়ঝোড়। বিয়ের দিন ঠিক হবে! আগের দিন থেকেই অনুষ্ঠান শুরু হবে। চারদিকে অনেক মানুষ। রঙিন আলো। সবাই যার যার মতো আনন্দে মেতে থাকবে।মেয়েটাকে হলুদ মাখাবে।অনেকে ভিড় করবে ছবি তুলতে! ফোটোগ্রাফাররাও চলে আসবে। আজকের রাত টা এ ভাবেই কেটে যাবে।


আজ বিয়ে চার দিকে অসংখ্য মানুষ। লাইট আর ক্যামেরা। আর সব কিছুর মাঝখানে মেয়েটা। হাত ভর্তি মেহেদী।গা ভর্তি গয়না,চুড়ি,শাড়ী।মুখে মেকাপ,ঠিক যেনো সাজিয়ে রাখা কোন নিশ্চল পুতুল।মেয়ে আত্নীয় অনেকেই আসছে ছবি তুলতে।কারন বরযাত্রী চলে এলে তাদের জন্য কোন চান্সই পাওয়া যাবে না।মেয়েটাও তাদের সাথে হাসি মুখে ছবি তুলবে। মেয়ের বাড়ির অনেকের খাওয়া শেষ।একটু পর বরযাত্রী চলে এলে বরকে পাশে বসিয়ে আবার ছবি তোলা শুরু হবে।তাদের সাথেও হাসি মুখে নিজেকে মানিয়ে নিবে মেয়েটা।


বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে মেয়ে তার পরিবারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বরের গাড়িতে করে এক অজানা পাড়ায় পাড়ি জমাবে! সেদিন রাতে মেয়েটার পরিচয় হবে বাসর রাত নামক এক নতুন রাতের সাথে। মেয়েটার বর আসবে তার স্বামির অধিকার নিয়ে। অধিকার আদায়ও করবে। কিছু কাঁচের চুড়ি ভাঙবে।তীব্র ক্রোধে চোখের জল গড়িয়ে পড়বে মেয়েটার।কিন্তু সে দিকে তার কোন ভ্রুক্ষেপ থাকবে না।থাকবে পৈশাচিক আনন্দ।

তারপর সকালে শশুর বাড়ির কিছু বাচাল মহিলা আসবে। এসে বিছানার আসে পাশে কিছু খুঁজবে। পেয়েও যাবে ভাঙা কাঁচের চুড়ি। তাদের মুখে এক মিশ্র প্রতিক্রিয়া ফুটে উঠবে। ঠোঁটে থাকবে একটা দুষ্ট হাসি। সবকিছুর পরও কিছু দিনের মধ্যেই শশুর বাড়ির সবাই কে আপন করে নেবে মেয়েটা।মেয়েটা কে ছাড়া মনে হয় তাদের একদিনও চলবে না! বছর ঘুরতেই সুখবর আসবে। মা,বাবা,শশুর বাড়ির সবার বহু অনাকাঙ্ক্ষিত ইচ্ছে পুরুন হবে। ফুটফুটে এক সন্তানের মা হবে মেয়েটা! সবাই তাকে নিয়ে মেতে থাকবে। আনন্দের জোয়ার বয়ে আসবে সবার মনে প্রাণে।সারাদিন বাচ্চার দেখা শুনা। সংসারের কাজ কর্ম,পরিবারের সবার দেখা শুনায় ব্যস্ত হয়ে বেশ ভালোই যাবে মেয়েটার দিন!

শুধু কখনো কখনো মাঝরাতে হঠাৎ বুকের বামপাশে চিনচিনে ব্যথা হবে। একটা অতিত চোখের সামনে ভাসবে,একটা চেনা মানুষের মুখ ভাসবে। আর তেমন কোন প্রিয় মানুষ না থাকলে কলেজের দিন গুলোর কথা মনে হবে।একটা চেনা চিরচেনা আড্ডার মাঠ কিছু অন্তরঙ্গ মানুষ, নিজের মনে মনে ঠিক করা কিছু স্বপ্ন,মনের রং তুলিতে আঁকা সেই সব দিন স্বপ্ন হয়ে ইচ্ছে স্মৃতির ক্যানভাসে ফুটে উঠবে। অথচ কেউ কোনদিন মেয়েটার স্বপ্ন বা ইচ্ছে কিছুই জানতে চায় নি।কেউ কোনোদিন জানবেও না- সেদিন লাল শাড়ি পরে,ফুল দিয়ে সাজানো গাড়ি করে কোনো বধু নয়।একটা জীবন্ত লাশ এসেছিলো। জানবে না কেউ, সেদিন রাতে শুধু কিছু কাঁচের চুড়িই ভাঙেনি,সাথে ভেঙেছিলো কারো হৃদয় দিয়ে সাজানো অগনিত স্বপ্ন!


এক সময় সব কিছু ভুলে যাবে ভুলতে চাইবে মেয়েটা। কিন্তু কিছু নির্দিষ্ট সময় মনে হবে আমারও কিছু স্বপ্ন ছিলো।একদিন হয়তো মেয়েটার চোখের পানিও শুকিয়ে যাবে।কিন্তু বুকের ব্যথা টা ঠিকই থাকবে করুন মৃত্যু পর্যন্ত।হয়তো মৃত্যু দিয়েই মেয়েটির তীব্র যন্ত্রনার অবসান হবে...............


লেখাঃ জান্নাতুন নাঈম মিথিলা



(তরুণ লেখকের জন্য শুভ কামনা TBM এর পক্ষ থেকে)


আপনিও পাঠাতে পারেন আপনার লেখা কবিতা,গল্প,প্রবন্ধ,বিজ্ঞানও গবেষণা বিষয়ক লেখা।আমরা আপনার প্রতিভাকে সবার কাছে প্রকাশ করতে চাই। আমাদের ফেসবুক পেইজ https://www.facebook.com/TalentBanglaMedia/?ref=bookmarks ও ওয়েবসাইটে লেখা পাঠাতে পারেন।সৃজনশীলতাই কাম্য।

No comments

Powered by Blogger.